ভূতুড়ে গল্প


 গল্প

আপনারা প্যারানরমালে বিশ্বাস করেন? আমি করি। আমি কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না, কিন্তু দেখার বাইরেও যে প্যারালাল আরেকটা জগত আছে, মানুষের জীবনের ওপর অদৃশ্য কিছু প্রভাবক আছে তা মানি। এই প্রবল বিশ্বাসের কারনেই মনে হয় মাঝে মধ্যে অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতা
আমার হয়। মামার মৃত্যু নিয়েও হয়েছে।

চোখের সামনে খুব কাছের কারও ক্যানসারে মৃত্যু আমি দেখিনি। মামাকেই প্রথম দেখলাম। আক্ষরিকভাবে একদম আমাদের চোখের সামনে মামা মারা গেল। মামার অবস্থা খুব দ্রুত খারাপ হচ্ছিলো, কিন্তু মারা যাচ্ছে এটা আমি মে মাসের শুরুর দিকেও কেউ বললে বিশ্বাস করতাম না। আমার একটা প্রবল দুরাশা ছিল মামা সেরে উঠবে, আবার সুস্থ হবে, বিশ্বাসের কারণ যাই হোক না কেন। কিন্তু ঠিক ঐ সময়টাতে আমি একরাতে একটা স্বপ্ন দেখলাম যে মামা বেঁচে নেই। স্বপ্নে কি দেখেছিলাম ঘুম থেকে উঠে আমার কিচ্ছু মনে পড়ছিল না, শুধু এটা মনে ছিল যে স্বপ্নের থিমটা হচ্ছে মামা আর নেই। অনেকে বলবে ওরকম সময়ে অমন স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক; নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা। ঠিক, আমিও তা মানি। কিন্তু এখানে পার্থক্য হচ্ছে নানার মৃত্যুর সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমি যখনই কারো মৃত্যু নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, সেটা সত্যি হয়েছে। এবং এর সবগুলাই ছিল কাছের মানুষদের নিয়ে, আমার প্রিয় মানুষদের নিয়ে। যাই হোক, ঘুম থেকে উঠে মনটা খুব বেশি খারাপ হয়ে গেল। আমি ওই প্রথম বুঝে গেলাম মামা আর বাঁচবে না। সময় হয়ে গেছে।


এখানে একটা কথা বলে নেই। আমি গত বছর মাঝামাঝি সময়েই আরেকটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, মামা খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। এটার কথা আমার মনে পড়েছে গত ২০ মে (মামার মৃত্যুদিন) এর পরে। এটার কথা এর আগে হয় মনে পড়েনি, বা পড়লেও রিলেট করতে পারিনি। যাই হোক, তৃতীয় ঘটনাটা ঘটলো মামা মারা যাবার ঠিক সপ্তাহ খানেক আগে। এবারও স্বপ্ন। এবার পরিষ্কার দেখলাম মামা মারা গেছে। মামার দেহ মগবাজারে নানার বাসার দোতলায় ডাইনিং রুমের মেঝেতে রাখা, নানি মামার পায়ের কাছে একটা চেয়ারে বসা, আর নানা তার পুরানো ঘরে বিছানার ওপর জায়নামাজে চোখ বন্ধ করে বসে আছে; বেঁচে থাকতে ঠিক যেভাবে বসে থেকে নামাজ পড়তো! স্বপ্নের মধ্যেই আমার মনে হচ্ছিলো নানা যেন তার প্রিয় ছেলের জন্য দোয়া করতে ওপার থেকে চলে এসেছে। এবং এখন সে তার ছোট ছেলেকে নিরাপদে নিয়ে চলে যাবে। যে রাতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মামা আইসিইউ তে গেল সেদিন না কি মামার খুব ডেলিরিয়াম হচ্ছিলো। পায়ের কাছে মামা নানার ছবি দেখেছিলো; মামিকে বলেছিলো “আব্বাকে দেখছি পায়ের কাছে। আব্বার ছবি। সরায় রাখো। আমার পায়ে লাগবে।“ আমার স্বপ্নের সাথে মামার ডেলিরিয়ামের ধরনটা একটু বেশি কাকতালীয় হয়ে গেল না?


এবার শেষ ঘটনা। ১৮ মে আমি অফিস থেকে ফেরার পথে স্কয়ারে গেলাম। ১৪০৭ এ গিয়ে দেখি রুমে পুশা-শামা (মামার দুই ভাতিজি, আমার বড়-মামাতো বোনেরা), মামি, নানি, মামার বড়ছেলে, এরা আছে। মামা যেন একটু অস্থির, একটু পর পর রুমের এক কোন থেকে আরেক কোনের দিকে তাকাচ্ছে। আর নিঃশব্দে কি যেন একটা বিড়বিড় করে বলছে। প্রথমে ডেলিরিয়াম মনে হয়েছিলো। পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখি পুরোপুরি সচেতন, ঘোরের কোন চিহ্নও নেই; আমার তখন মনে হল মামা কোন দোয়া/সুরা পড়ছে। খানিকক্ষণ পরে মামিকে কি যেন একটা বলার চেষ্টা করলো ফিসফিস করে, কিন্তু মামি বুঝতে পারলো না দেখে ঐ অবস্থাতেই একটা নিরুপায় করুন হাসি দিয়ে হাল ছেড়ে দিলো। শ্বাসকষ্ট ছিলো। আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠে পড়লাম। বেডের হাতলে রাখা মামার হাতের ওপর হাত বুলিয়ে দেয়াতে আমার দিকে তাকাল। কিছু বোঝার আগেই আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল, “মামা, গেলাম। আবার পরে আসবো। খোদা হাফেজ।” মামা ঘাড় ঘুরিয়ে হাত নেড়ে বিদায় দিলো। কথা বলার চেষ্টা করে নি। মামার সাথে ঐটাই আমার শেষ কথা, বেঁচে থাকা অবস্থায় শেষ দেখা। এর ঘণ্টা দুয়েক পরেই প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। দেন আইসিইউ।


এখানে বলি, কারো কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় আমার মুদ্রাদোষ হচ্ছে সবসময় “ওকে তাহলে, দেখা হবে” বলে কথা শেষ করা। একদম সবসময়! “খোদা হাফেজ” আমি খুব রেয়ারলি বলি। বিদায় নিয়ে বের হবার পরে আমার মনে হল “পরে আসবো” কথাটা কেন বললাম? একটু চিন্তা নিয়েই বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে ঠান্ডা হচ্ছি, একটু পরেই নানির ফোন। কান্নাজড়ানো কণ্ঠ ভেসে আসলো, “রাতুল, তোর মামা আর নাই! শীগগির আয়!” আমি আম্মাকে নিয়ে সাথে সাথে আবার স্কয়ারের দিকে রওনা দিলাম, ঐ রাতেই। অর্থাৎ মামাকে যা বলে বিদায় নিয়েছিলাম। এবার শুধু পার্থক্যটা ছিল, মামা আর পৃথিবীতে নেই এটা জেনে।


কিন্তু শেষ ঘটনাটা এটা না। শেষ ঘটনাটা কি ছিলো সেটা এবার বলবো। মামা আইসিইউ তে যায় ১৮ মে রাতে। সারারাত আমরা অনেক মানুষ জেগে/হাফ জেগে আইসিইউ করিডরের সামনে কাটালাম। এটা জানা হয়ে গিয়েছিলো মামার বাঁচার আর কোন আশা নেই। ১৯ তারিখ দিনের বেলা ডিসিশন হল বড়মামা এসে (২১ তারিখে) যদি ভেন্টিলেশন খুলে নেয়ার ডিসিশন নিতে হয়, নিবে। সে কথামত সবাই ধরে নিল ২১ মে সকাল পর্যন্ত মামা ভেন্টিলেশন মেশিন দিয়ে হলেও বেঁচে আছে। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম ১৯ তারিখ রাতে ইমেডিয়েট ফ্যামিলি ছাড়া হাসপাতালে আর কারো থাকার দরকার নেই। থাকবে শুধু মামি, মামির ভাবি, আর আমার আম্মার মামাতো বোন চুমকি খালা। আমার নিজেরও থাকার কথা ছিল না। রাত ১২টা বাজে বাজে এমন সময় মনে হল থেকেই যাই। অ্যাট লিস্ট একজন পুরুষ আত্মীয় রাতে থাকুক। আমি জানতাম না একটু পরে আম্মার মামাত ভাই রাজিব মামাও আসবে। আমি হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে হাল্কা ডিনার নিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের রিসেপশনের সামনে থাকা অনেকগুলা সোফার একটাতে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। তখন রাত প্রায় পৌনে একটা। জানিও না কখন রাজিব মামা এসে উপরে গিয়ে মামিদের আইসিইউ-এর দরজার সামনে থেকে ডানদিকে একটু ভিতরে একটা প্যাসেজের কোনায় শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছে। ওখান থেকে আইসিইউ দেখা যায় না, আইসিইউ থেকে নার্স এসে রোগীর অ্যাটেনডেন্টকে খুঁজলে কাউকে দেখতে পাবে না।


ভোর ঠিক সাড়ে চারটার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। জেগে দেখি আমি ঠাণ্ডায় কাঁপছি। জ্বর, কাশি, সর্দি, কিচ্ছু না; কিন্তু দাঁতকপাটি লেগে যাচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো শরীরের সব রক্ত জমে বরফ হয়ে গেছে, এত ঠাণ্ডা! নরমালি আমার এত ঠাণ্ডা লাগে না। তাকিয়ে দেখি আশে পাশে অনেক মানুষ আমার মতই ওখানে থাকা সোফাগুলায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি ছাড়া কারো মধ্যে ঠান্ডাজনিত বিন্দুমাত্র অস্বস্তির ভাব নেই। এখানে আরেকটা কথা বলি, আমি এভারেজের চেয়ে বেশি ঘামি, যত ঠান্ডাই হোক; এসির মধ্যে আমার কখোনও তেমন প্রব্লেম হয় না। যাই হোক, ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমি রিসেপশন করিডর থেকে লিফটের উইং-এ আসলাম। ঠাণ্ডা কমে গেল। পিছনে তাকিয়ে দেখি রাজিব মামাও ঘুম ভেঙ্গে উঠে এগিয়ে আসছে। লিফটে উঠে দুইজনে লেভেল ফোরে আইসিইউ-তে চলে আসলাম। এসে দেখি গোটা করিডরে মাত্র একজন ভদ্রমহিলা বসে আছেন (মামিরা তো আগেই বলেছি একটু ভিতরের দিকে ছিল)! এছাড়া গোটা ফ্লোরে আইসিইউ-র সামনে একটা মানুষ নেই। অথচ আগের দিনেই দেখেছিলাম আমরা ছাড়াও অন্যান্য রোগীর বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজনেরা আছে। যাই হোক, আগে থেকে এনে রাখা একটা কম্বলে নিজেদের ঢেকে আমি আর রাজিব মামা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।


ঠিক আধা ঘণ্টা পরে (ভোর পাঁচটা) আমার ঘুম আবার ভেঙ্গে গেল। দেখি আইসিইউ থেকে একজন মেল নার্স বের হয়ে আসছে। বের হয়ে বলল “বেড#১৩ এর কে আছেন?” আমার মাথার মধ্যে কেউ যেন বলে দিলো, মামার বেড নম্বরই ১৩! আমি ধড়মড় করে উঠে রাজিব মামাকে বললাম “মামিকে ডাকেন। বলেন ভিতর থেকে ডাকতে আসছে!” আমার ভুল হয়নি। রাজিব মামা মামিকে ডাক দেয়াতে মামি জেগে উঠে তাড়াহুড়া করে ভিতরে গেল। স্বাতী মামি উঠে দোয়া দরূদ পড়ছে। কিন্তু ততক্ষণে মামা নেই। মামি একটু পরে বাইরে এসে দেয়াল ধরে তার সদ্যমৃত স্বামীর জন্য কেঁদে উঠলো।


পরে ডাক্তারের মুখে শুনেছিলাম মামার দ্বিতীয় অ্যারেস্টটা হয় ভোর ৪ টায়, আর শেষবারটা হয় ভোর সাড়ে ৪টায়, মানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা অবস্থায় ঠিক যখন প্রবল ঠাণ্ডায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখন আমার কথা হচ্ছে; ডাক্তারের সময় অনুযায়ি মামাকে যখন প্রোনাউন্স করা হলো (ভোর ৫টা ৫ মিনিট), তখন করিডরে আমি আর রাজিব মামা ছাড়া আমাদের আর কেউ ছিল না। আমরা ঐ সময় ওখানে না থাকলে মামার মৃত্যুর পরে নার্স এসে কাউকে পেতো না। মামি উঠে নিজে থেকে পরের বার মামার অবস্থা চেক অন করতে না যাওয়া পর্যন্ত মামার দেহকে ঐ অবস্থাতেই বেডে শুয়ে থাকতে হত, কতক্ষণের জন্য কে জানে? ঠিক সেকেন্ড অ্যাটাকের সময়েই আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, হঠাৎ চরম ঠান্ডার প্রভাবে আইসিইউ-র ফ্লোরে সময়মত চলে আসা, আবার মামার মৃত্যুর পর নার্স ডাক দেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, এগুলা শুনতে যতই সহজ আর কাকতালীয় হোক, আমার কাছে এত সহজ না। মামা যতদিন বেঁচে ছিল, প্রয়োজনে/বিপদে-আপদে আমার জানাত, বন্ধুবান্ধবের সাথে সাথে আমাকেও ইনফরম করে রাখতো। অনেকে বলতে পারেন আমি পাগলের প্রলাপ বকছি, ইম্যাজিনিং থিংগস, বা কল্পনার যোগফল মেলাচ্ছি; কিন্তু আমি নিশ্চিত, মামা ঐ ভোররাতে চলে যাবার আগে এসে কোন এক উপায়ে তার সেই চিরপরিচিত ভঙ্গিতে আমাকে বলেছে, “উপরে আয়। আমি চলে যাচ্ছি। তোরা এই সময়টা আমার কাছাকাছি থাক।” আর সেজন্যই ঘুম ভেঙ্গে ঠিক সময় ঠিক জায়গামত থাকা হয়েছিলো আমাদের।


আমি মামাকে এর পরে আর স্বপ্নে দেখিনি। এখন পর্যন্ত না। মামার বন্ধুবান্ধব, নানি, মামি, কলিগরা হয়তো দেখেছে, কিন্তু আমি না। তবে আমি জানি আমি দেখবো। আজ হোক, কাল হোক, দুই মাস পরেই হোক, মামা আমাকে দেখা দিবেই। দেখা দিয়ে জানাবে সে এখন কেমন আছে। মারা যাওয়ার পরে মামার চেহারায় একটা প্রশান্তির চাপ ছিল, হাসিহাসি মুখটা আবার ফিরে এসেছিল। শুধুমাত্র চুলহীন মাথা, আর ঠোঁটে একটা জ্বরঠোসা ছাড়া ফেটাল রোগটার কোন প্রভাব মুখে ছিল না। বরং মনে হচ্ছিলো মামা যেন অবশেষে পরম শান্তিতে ঘুমানোর সুযোগ পেল, যার জন্য অপেক্ষাটা ছিল বহুদিনের। প্রতিদিনই মামার কথা আমার মনে পড়ে; মনে পড়ে হাজারটা স্মৃতি, হাসি, কান্না, আনন্দের ছোট ছোট অজস্র টুকরাগুলার কথা। কম তো না, ৩৩ বছরের পরিচয়! কিছু সম্পর্ক মৃত্যুর সাথে শেষ হয়ে যায় না, জন্মান্তরে এগুলার রেশ রয়ে যায়। আর একারনেই আমি জানি মামাকে আমি দেখবো, খুব শিগগিরই দেখবো। আমার সাথে দেখা না করে কি ছোটমামা পারে?

 
 
Photo: আপনারা প্যারানরমালে বিশ্বাস করেন? আমি করি। আমি কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না, কিন্তু দেখার বাইরেও যে প্যারালাল আরেকটা জগত আছে, মানুষের জীবনের ওপর অদৃশ্য কিছু প্রভাবক আছে তা মানি। এই প্রবল বিশ্বাসের কারনেই মনে হয় মাঝে মধ্যে অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতা আমার হয়। মামার মৃত্যু নিয়েও হয়েছে।

 

চোখের সামনে খুব কাছের কারও ক্যানসারে মৃত্যু আমি দেখিনি। মামাকেই প্রথম দেখলাম। আক্ষরিকভাবে একদম আমাদের চোখের সামনে মামা মারা গেল। মামার অবস্থা খুব দ্রুত খারাপ হচ্ছিলো, কিন্তু মারা যাচ্ছে এটা আমি মে মাসের শুরুর দিকেও কেউ বললে বিশ্বাস করতাম না। আমার একটা প্রবল দুরাশা ছিল মামা সেরে উঠবে, আবার সুস্থ হবে, বিশ্বাসের কারণ যাই হোক না কেন। কিন্তু ঠিক ঐ সময়টাতে আমি একরাতে একটা স্বপ্ন দেখলাম যে মামা বেঁচে নেই। স্বপ্নে কি দেখেছিলাম ঘুম থেকে উঠে আমার কিচ্ছু মনে পড়ছিল না, শুধু এটা মনে ছিল যে স্বপ্নের থিমটা হচ্ছে মামা আর নেই। অনেকে বলবে ওরকম সময়ে অমন স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক; নিতান্তই কাকতালীয় ঘটনা। ঠিক, আমিও তা মানি। কিন্তু এখানে পার্থক্য হচ্ছে নানার মৃত্যুর সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমি যখনই কারো মৃত্যু নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, সেটা সত্যি হয়েছে। এবং এর সবগুলাই ছিল কাছের মানুষদের নিয়ে, আমার প্রিয় মানুষদের নিয়ে। যাই হোক, ঘুম থেকে উঠে মনটা খুব বেশি খারাপ হয়ে গেল। আমি ওই প্রথম বুঝে গেলাম মামা আর বাঁচবে না। সময় হয়ে গেছে।

 

এখানে একটা কথা বলে নেই। আমি গত বছর মাঝামাঝি সময়েই আরেকটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, মামা খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে। এটার কথা আমার মনে পড়েছে গত ২০ মে (মামার মৃত্যুদিন) এর পরে। এটার কথা এর আগে হয় মনে পড়েনি, বা পড়লেও রিলেট করতে পারিনি। যাই হোক, তৃতীয় ঘটনাটা ঘটলো মামা মারা যাবার ঠিক সপ্তাহ খানেক আগে। এবারও স্বপ্ন। এবার পরিষ্কার দেখলাম মামা মারা গেছে। মামার দেহ মগবাজারে নানার বাসার দোতলায় ডাইনিং রুমের মেঝেতে রাখা, নানি মামার পায়ের কাছে একটা চেয়ারে বসা, আর নানা তার পুরানো ঘরে বিছানার ওপর জায়নামাজে চোখ বন্ধ করে বসে আছে; বেঁচে থাকতে ঠিক যেভাবে বসে থেকে নামাজ পড়তো! স্বপ্নের মধ্যেই আমার মনে হচ্ছিলো নানা যেন তার প্রিয় ছেলের জন্য দোয়া করতে ওপার থেকে চলে এসেছে। এবং এখন সে তার ছোট ছেলেকে নিরাপদে নিয়ে চলে যাবে। যে রাতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে মামা আইসিইউ তে গেল সেদিন না কি মামার খুব ডেলিরিয়াম হচ্ছিলো। পায়ের কাছে মামা নানার ছবি দেখেছিলো; মামিকে বলেছিলো “আব্বাকে দেখছি পায়ের কাছে। আব্বার ছবি। সরায় রাখো। আমার পায়ে লাগবে।“ আমার স্বপ্নের সাথে মামার ডেলিরিয়ামের ধরনটা একটু বেশি কাকতালীয় হয়ে গেল না?

 

এবার শেষ ঘটনা। ১৮ মে আমি অফিস থেকে ফেরার পথে স্কয়ারে গেলাম। ১৪০৭ এ গিয়ে দেখি রুমে পুশা-শামা (মামার দুই ভাতিজি, আমার বড়-মামাতো বোনেরা), মামি, নানি, মামার বড়ছেলে, এরা আছে। মামা যেন একটু অস্থির, একটু পর পর রুমের এক কোন থেকে আরেক কোনের দিকে তাকাচ্ছে। আর নিঃশব্দে কি যেন একটা বিড়বিড় করে বলছে। প্রথমে ডেলিরিয়াম মনে হয়েছিলো। পরে ভালো করে খেয়াল করে দেখি পুরোপুরি সচেতন, ঘোরের কোন চিহ্নও নেই; আমার তখন মনে হল মামা কোন দোয়া/সুরা পড়ছে। খানিকক্ষণ পরে মামিকে কি যেন একটা বলার চেষ্টা করলো ফিসফিস করে, কিন্তু মামি বুঝতে পারলো না দেখে ঐ অবস্থাতেই একটা নিরুপায় করুন হাসি দিয়ে হাল ছেড়ে দিলো। শ্বাসকষ্ট ছিলো। আমি আর থাকতে পারলাম না। উঠে পড়লাম। বেডের হাতলে রাখা মামার হাতের ওপর হাত বুলিয়ে দেয়াতে আমার দিকে তাকাল। কিছু বোঝার আগেই আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেল, “মামা, গেলাম। আবার পরে আসবো। খোদা হাফেজ।” মামা ঘাড় ঘুরিয়ে হাত নেড়ে বিদায় দিলো। কথা বলার চেষ্টা করে নি। মামার সাথে ঐটাই আমার শেষ কথা, বেঁচে থাকা অবস্থায় শেষ দেখা। এর ঘণ্টা দুয়েক পরেই প্রথম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। দেন আইসিইউ।

 

এখানে বলি, কারো কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় আমার মুদ্রাদোষ হচ্ছে সবসময় “ওকে তাহলে, দেখা হবে” বলে কথা শেষ করা। একদম সবসময়! “খোদা হাফেজ” আমি খুব রেয়ারলি বলি। বিদায় নিয়ে বের হবার পরে আমার মনে হল “পরে আসবো” কথাটা কেন বললাম? একটু চিন্তা নিয়েই বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে ঠান্ডা হচ্ছি, একটু পরেই নানির ফোন। কান্নাজড়ানো কণ্ঠ ভেসে আসলো, “রাতুল, তোর মামা আর নাই! শীগগির আয়!” আমি আম্মাকে নিয়ে সাথে সাথে আবার স্কয়ারের দিকে রওনা দিলাম, ঐ রাতেই। অর্থাৎ মামাকে যা বলে বিদায় নিয়েছিলাম। এবার শুধু পার্থক্যটা ছিল, মামা আর পৃথিবীতে নেই এটা জেনে।

 

কিন্তু শেষ ঘটনাটা এটা না। শেষ ঘটনাটা কি ছিলো সেটা এবার বলবো। মামা আইসিইউ তে যায় ১৮ মে রাতে। সারারাত আমরা অনেক মানুষ জেগে/হাফ জেগে আইসিইউ করিডরের সামনে কাটালাম। এটা জানা হয়ে গিয়েছিলো মামার বাঁচার আর কোন আশা নেই। ১৯ তারিখ দিনের বেলা ডিসিশন হল বড়মামা এসে (২১ তারিখে) যদি ভেন্টিলেশন খুলে নেয়ার ডিসিশন নিতে হয়, নিবে। সে কথামত সবাই ধরে নিল ২১ মে সকাল পর্যন্ত মামা ভেন্টিলেশন মেশিন দিয়ে হলেও বেঁচে আছে। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম ১৯ তারিখ রাতে ইমেডিয়েট ফ্যামিলি ছাড়া হাসপাতালে আর কারো থাকার দরকার নেই। থাকবে শুধু মামি, মামির ভাবি, আর আমার আম্মার মামাতো বোন চুমকি খালা। আমার নিজেরও থাকার কথা ছিল না। রাত ১২টা বাজে বাজে এমন সময় মনে হল থেকেই যাই। অ্যাট লিস্ট একজন পুরুষ আত্মীয় রাতে থাকুক। আমি জানতাম না একটু পরে আম্মার মামাত ভাই রাজিব মামাও আসবে। আমি হসপিটালের ক্যান্টিন থেকে হাল্কা ডিনার নিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের রিসেপশনের সামনে থাকা অনেকগুলা সোফার একটাতে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। তখন রাত প্রায় পৌনে একটা। জানিও না কখন রাজিব মামা এসে উপরে গিয়ে মামিদের আইসিইউ-এর দরজার সামনে থেকে ডানদিকে একটু ভিতরে একটা প্যাসেজের কোনায় শোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছে। ওখান থেকে আইসিইউ দেখা যায় না, আইসিইউ থেকে নার্স এসে রোগীর অ্যাটেনডেন্টকে খুঁজলে কাউকে দেখতে পাবে না।

 

ভোর ঠিক সাড়ে চারটার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। জেগে দেখি আমি ঠাণ্ডায় কাঁপছি। জ্বর, কাশি, সর্দি, কিচ্ছু না; কিন্তু দাঁতকপাটি লেগে যাচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো শরীরের সব রক্ত জমে বরফ হয়ে গেছে, এত ঠাণ্ডা! নরমালি আমার এত ঠাণ্ডা লাগে না। তাকিয়ে দেখি আশে পাশে অনেক মানুষ আমার মতই ওখানে থাকা সোফাগুলায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি ছাড়া কারো মধ্যে ঠান্ডাজনিত বিন্দুমাত্র অস্বস্তির ভাব নেই। এখানে আরেকটা কথা বলি, আমি এভারেজের চেয়ে বেশি ঘামি, যত ঠান্ডাই হোক; এসির মধ্যে আমার কখোনও তেমন প্রব্লেম হয় না। যাই হোক, ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমি রিসেপশন করিডর থেকে লিফটের উইং-এ আসলাম। ঠাণ্ডা কমে গেল। পিছনে তাকিয়ে দেখি রাজিব মামাও ঘুম ভেঙ্গে উঠে এগিয়ে আসছে। লিফটে উঠে দুইজনে লেভেল ফোরে আইসিইউ-তে চলে আসলাম। এসে দেখি গোটা করিডরে মাত্র একজন ভদ্রমহিলা বসে আছেন (মামিরা তো আগেই বলেছি একটু ভিতরের দিকে ছিল)! এছাড়া গোটা ফ্লোরে আইসিইউ-র সামনে একটা মানুষ নেই। অথচ আগের দিনেই দেখেছিলাম আমরা ছাড়াও অন্যান্য রোগীর বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজনেরা আছে। যাই হোক, আগে থেকে এনে রাখা একটা কম্বলে নিজেদের ঢেকে আমি আর রাজিব মামা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।

 

ঠিক আধা ঘণ্টা পরে (ভোর পাঁচটা) আমার ঘুম আবার ভেঙ্গে গেল। দেখি আইসিইউ থেকে একজন মেল নার্স বের হয়ে আসছে। বের হয়ে বলল “বেড#১৩ এর কে আছেন?” আমার মাথার মধ্যে কেউ যেন বলে দিলো, মামার বেড নম্বরই ১৩! আমি ধড়মড় করে উঠে রাজিব মামাকে বললাম “মামিকে ডাকেন। বলেন ভিতর থেকে ডাকতে আসছে!” আমার ভুল হয়নি। রাজিব মামা মামিকে ডাক দেয়াতে মামি জেগে উঠে তাড়াহুড়া করে ভিতরে গেল। স্বাতী মামি উঠে দোয়া দরূদ পড়ছে। কিন্তু ততক্ষণে মামা নেই। মামি একটু পরে বাইরে এসে দেয়াল ধরে তার সদ্যমৃত স্বামীর জন্য কেঁদে উঠলো।

 

পরে ডাক্তারের মুখে শুনেছিলাম মামার দ্বিতীয় অ্যারেস্টটা হয় ভোর ৪ টায়, আর শেষবারটা হয় ভোর সাড়ে ৪টায়, মানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা অবস্থায় ঠিক যখন প্রবল ঠাণ্ডায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এখন আমার কথা হচ্ছে; ডাক্তারের সময় অনুযায়ি মামাকে যখন প্রোনাউন্স করা হলো (ভোর ৫টা ৫ মিনিট), তখন করিডরে আমি আর রাজিব মামা ছাড়া আমাদের আর কেউ ছিল না। আমরা ঐ সময় ওখানে না থাকলে মামার মৃত্যুর পরে নার্স এসে কাউকে পেতো না। মামি উঠে নিজে থেকে পরের বার মামার অবস্থা চেক অন করতে না যাওয়া পর্যন্ত মামার দেহকে ঐ অবস্থাতেই বেডে শুয়ে থাকতে হত, কতক্ষণের জন্য কে জানে? ঠিক সেকেন্ড অ্যাটাকের সময়েই আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, হঠাৎ চরম ঠান্ডার প্রভাবে আইসিইউ-র ফ্লোরে সময়মত চলে আসা, আবার মামার মৃত্যুর পর নার্স ডাক দেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে আমার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, এগুলা শুনতে যতই সহজ আর কাকতালীয় হোক, আমার কাছে এত সহজ না। মামা যতদিন বেঁচে ছিল, প্রয়োজনে/বিপদে-আপদে আমার জানাত, বন্ধুবান্ধবের সাথে সাথে আমাকেও ইনফরম করে রাখতো। অনেকে বলতে পারেন আমি পাগলের প্রলাপ বকছি, ইম্যাজিনিং থিংগস, বা কল্পনার যোগফল মেলাচ্ছি; কিন্তু আমি নিশ্চিত, মামা ঐ ভোররাতে চলে যাবার আগে এসে কোন এক উপায়ে তার সেই চিরপরিচিত ভঙ্গিতে আমাকে বলেছে, “উপরে আয়। আমি চলে যাচ্ছি। তোরা এই সময়টা আমার কাছাকাছি থাক।” আর সেজন্যই ঘুম ভেঙ্গে ঠিক সময় ঠিক জায়গামত থাকা হয়েছিলো আমাদের।

 

আমি মামাকে এর পরে আর স্বপ্নে দেখিনি। এখন পর্যন্ত না। মামার বন্ধুবান্ধব, নানি, মামি, কলিগরা হয়তো দেখেছে, কিন্তু আমি না। তবে আমি জানি আমি দেখবো। আজ হোক, কাল হোক, দুই মাস পরেই হোক, মামা আমাকে দেখা দিবেই। দেখা দিয়ে জানাবে সে এখন কেমন আছে। মারা যাওয়ার পরে মামার চেহারায় একটা প্রশান্তির চাপ ছিল, হাসিহাসি মুখটা আবার ফিরে এসেছিল। শুধুমাত্র চুলহীন মাথা, আর ঠোঁটে একটা জ্বরঠোসা ছাড়া ফেটাল রোগটার কোন প্রভাব মুখে ছিল না। বরং মনে হচ্ছিলো মামা যেন অবশেষে পরম শান্তিতে ঘুমানোর সুযোগ পেল, যার জন্য অপেক্ষাটা ছিল বহুদিনের। প্রতিদিনই মামার কথা আমার মনে পড়ে; মনে পড়ে হাজারটা স্মৃতি, হাসি, কান্না, আনন্দের ছোট ছোট অজস্র টুকরাগুলার কথা। কম তো না, ৩৩ বছরের পরিচয়! কিছু সম্পর্ক মৃত্যুর সাথে শেষ হয়ে যায় না, জন্মান্তরে এগুলার রেশ রয়ে যায়। আর একারনেই আমি জানি মামাকে আমি দেখবো, খুব শিগগিরই দেখবো। আমার সাথে দেখা না করে কি ছোটমামা পারে?

কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন । ভাল লাগলে লাইক দিতে ভুলবেন না ।

(অরণ্য)


 গল্প
।। রাত জাগা পাখি ।।


রাত জাগা পাখি নামে আমাদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা চার বন্ধু মিলে এই গ্রুপ বানিয়েছি।গভীর রাতে ফুল কানন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আমাদের আড্ডা বসে। গ্রুপে মাঝে মাঝে অতিথী মেম্বাররা আসে। এক রাত আড্ডা দিতেই তাদের কাপড়ে চোপড়
ে হয়ে যায় বলে তারা আর দ্বিতীয় বার আড্ডায় আসেনা। তাতে অবশ্য আমাদের সমস্যা নেই। শেয়ালের ডাক শুনেই যারা ভয় পায় তাদের না আসাই ভালো।রাত

জাগা পাখির মেম্বারদের মধ্যে আমি আর পুলক সবচাইতে এক্টিভ। রাহাত আর জনি ইদানিং বিদ্যা দেবীর আরাধনা করেই রাত কাটায়।আজো তারা বিদ্যা দেবীর পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে অগ্যতা আমি আর পুলকই ঘর থেকে হলাম। পুলকের বাড়ি আমার বাড়ির পাশেই। বের হয়েই পুলক কে পেয়ে গেলাম। দুইজন মিলে গল্প করতে করতে এগোতে লাগলাম।গন্তব্য স্কুলের মাঠ। পারার কে কবে কি করলো এরকম হালকা চালের গল্প হচ্ছিলো। এর মাঝে খানিকটা অপ্রাসঙ্গিক ভাবেই পুলক বলে উঠলো “ রাতুল তুই রুমুর চিন্তা বাদ দে,লাভ নাই”

আকাশ থেকে পড়লাম!রুমুর কথা ও কিভাবে জানলো!আমি তো কাউকেই বলিনি আমার ওকে ভালো লাগে।পুলকের দিকে অবাক চোখে তাকালাম।ও যেনো আমার মনের কথা বুঝেই কৈফিয়ত দিলো “ দোস্ত তুই না বললেও আমি বুঝি” হঠাৎ করে পুলককে কেমন অচেনা ঠেকলো। নিজের অজান্তে শিড়দাড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। সামান্য রুমুর কথায় নাকি অমাবস্যার ভুতুড়ে পরিবেশে এমন হলো তা বুঝতে পারলাম না। পুলক কে বললাম “আজ ভালো লাগছেনা।চল ফিরে যাই।“ পুলক আমার কথা শুনে আকাশ বাতাস কাপিয়ে হাসতে লাগলো “ দোস্ত আজকের ওয়েদারের সাথে তোর ভয়টা খুব মানাইছে।“

“ফালতু কথা রাখ তো। ভয় পাওয়ার কথা কখন বললাম! ঠিক আছে চল” কথা বললেই লস্‌! একরাশ বিরক্তি আর অজানা ভয় নিয়ে হাটতে হাটতে মাঠে পৌছালাম। মাঠের এক পাশে আম গাছটার সাথে অস্পষ্ট কি যেনো একটা চোখে পড়লো।পুলক কে দেখাতেই পুলক এগিয়ে গেলো গাছের দিকে।আমিও পিছু নিলাম।গাছের কাছে পৌছেই বরফের মতো জমে গেলাম।পায়ে যেনো শিকড় গজিয়ে গেছে।গাছের সাথে পুলককে বেধে রাখা হয়েছে! তাঁহলে আমার পাশে কে?পুলক কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো “ দোস্ত সন্ধ্যা থেকে বাইন্ধ্যা রাখছে,তারাতারি দড়ি খুলে দে”

পুলকের কথা আমার কানে গেলো,দুরে শেয়ালের ডাক ও শুনতে পেলাম। কিন্তু এক বিন্দু নড়তে পারলাম না।আমার সামনে এক পুলক, পাশে আরেক পুলক!এতোটুকু নড়ার ক্ষমতা নেই। আর মধ্যে পুলক বলেই চলেছে “ দোস্ত প্লিজ খুলে দে” আমি প্রানপণে আল্লাহ্‌কে ডাকতে লাগলাম।সমস্ত শক্তি এক করে দুই পুলক কে রেখেই ঝেরে দৌড় দিলাম। আমার পেছনে পায়ের শব্দ পাচ্ছি।পায়ের শব্দ দ্রুত এগিয়ে আসছে।এক সময় পেছনের মুর্তি আমার কাধ খামচে ধরলো “ রাতুল দাড়া ঐ বান্ধা লোক টা আমি না, তুই আমারে ফেলে যাইস না”

আমি এক ঝটকায় হাত সড়িয়ে নিয়ে উলটো ঘুরে আবার মাঠের দিকে দৌড়াতে লাগলাম।পেছনে আর পায়ের আওয়াজ আসছেনা।বন্ধুকে ফেলে গিয়ে একবার বেঈমানী করেছি দ্বিতীয়বার আর করলামনা।গাছের কাছে গিয়ে পুলকের বাধন খুলে দিলাম।পুলক আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। এক ফোটা সাহস ও বাকি ছিলো না। পুলকের ওপর ভরসা করে শরীর ছেড়ে দিলাম।পুলক যেদিকে ছুটছে আমিও চোখ বন্ধ করে সেদিকেই ছুটছি।হঠাৎ পুলক থেমে গেলো।
“ দোস্ত বাড়ি আসছি?” কাঁপা গলায় আমি বললাম।
“ হ তোর শ্বশুড় বাড়ি আইছোস” অচেনা একটা কণ্ঠ অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠলো।
চমকে গিয়ে পুলকের দিকে ভালো করে তাকাতেই যা দেখলাম তা জ্ঞান হারানোর জন্যে যথেষ্ঠ!জ্ঞান ফেরার পর বিছানায় নিজেকে আবিস্কার করলাম। সবার মুখে যা শুনলাম তার সারমর্ম হলো আমাকে পরেরদিন সকালে মোসলেম ডাকাতের কবরের পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে।সেই মোসলেম ডাকাত যাকে কিনা গতবছর স্কুলের ঐ গাছের সাথে বেধে পেটানো হয়েছিলো।এলাকাবাসির মার খেয়েই তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর পুলক বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে...দশদিন পর পুলক মারা যায়…আর আমি? আমি প্রতি রাতে স্বপ্নে দেখি পুলক আমার কাধ খামছে বলছে “দোস্ত ঐ বান্ধা লোকটা আমি না!আমারে ফেলে যাইস না!”
 গল্প
 

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা শহরের তেবাড়িয়া এলাকায় একবার দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৬ সদস্য মারা যায়।। তারা একত্রে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিল।। সেই পরিবারের সকল সদস্যই সেইদিন ঐ গাড়িতে ছিল যেই গাড়ি এক্সিডেন্টে তারা মারা যায়।।

যাই হ
োক, তাদের সবাইকে একই সাথে একই স্থানে পাশাপাশি কবর দেয়া হয়।।

সেই পরিবার যেই বাড়িতে থাকতো সেই বাড়িটি এরপর থেকে ফাঁকা পরে থাকে প্রায় ১ মাস।।

মাস খানেক পর, ঐ বাড়ির কর্তা শাইখ আলীর এক চাচা তাঁর পরিবার নিয়ে আসেন বাড়িটিতে থাকার জন্য।।

বাড়িটিতে থাকার কয়েকদিন পর থেকেই তারা অদ্ভুত কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করেন।। যেমন, গভীর রাতে রুমে কারো চলাফেরা করা।। দরজা জানালা সব ভিতর থেকে বন্ধ তবুও মনে হয় কারা যেনো বাড়ির ভেতরের রুমে বসে গল্প করছে।।

শাইখ আলীর চাচার থাকার আর কোনও জায়গা ছিল না তাই তারা এইসব ঘটনার পরেও সেই বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।।

সেই সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দাঁড়ায় যখন তার ছোট মেয়েকে একদিন সন্ধ্যার পর কলপাড়ে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।। মেয়েটি জ্ঞান ফেরার পর থেকে কথা বার্তা বলা বন্ধ করে দেয়।। শুধু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে নিজের ঘরের বাম পাশের কোণার দিকে।। আর গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে থাকে।। এই সময়ে থাকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে, "কেউ একজন ঘুমের মধ্যে এসে তার গালে থাপ্পড়/চড় মারে এবং প্রচণ্ড ব্যাথায় তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।।" কিন্তু ঘুম থেকে উঠে সে কাউকেই দেখতে পায় না।। পরিবারের বাকি সদস্যরা লক্ষ্য করে, মেয়েটির গালে লাল লাল চড়ের দাগ স্পষ্ট দেখা যায়।।

অবস্থা বেগতিক দেখে অবশেষে শাইখ আলী চাচা পরিবার নিয়ে ঐ বাড়ি থেকে সরে যান।। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেই বাড়ি ছেড়ে দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়েটি আবার নিজের পুরনো জীবন ফিরে পায়।।

তথ্যটি জানিয়েছেনঃ আহসান সেলিম অরণ্য (Ahsan Selim Oronno) (অ্যাডমিন)

Photo: কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা শহরের তেবাড়িয়া এলাকায় একবার দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৬ সদস্য মারা যায়।। তারা একত্রে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিল।। সেই পরিবারের সকল সদস্যই সেইদিন ঐ গাড়িতে ছিল যেই গাড়ি এক্সিডেন্টে তারা মারা যায়।।

যাই হোক, তাদের সবাইকে একই সাথে একই স্থানে পাশাপাশি কবর দেয়া হয়।।

সেই পরিবার যেই বাড়িতে থাকতো সেই বাড়িটি এরপর থেকে ফাঁকা পরে থাকে প্রায় ১ মাস।।

মাস খানেক পর, ঐ বাড়ির কর্তা শাইখ আলীর এক চাচা তাঁর পরিবার নিয়ে আসেন বাড়িটিতে থাকার জন্য।।

বাড়িটিতে থাকার কয়েকদিন পর থেকেই তারা অদ্ভুত কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করেন।। যেমন, গভীর রাতে রুমে কারো চলাফেরা করা।। দরজা জানালা সব ভিতর থেকে বন্ধ তবুও মনে হয় কারা যেনো বাড়ির ভেতরের রুমে বসে গল্প করছে।।

শাইখ আলীর চাচার থাকার আর কোনও জায়গা ছিল না তাই তারা এইসব ঘটনার পরেও সেই বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।।

সেই সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দাঁড়ায় যখন তার ছোট মেয়েকে একদিন সন্ধ্যার পর কলপাড়ে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।। মেয়েটি জ্ঞান ফেরার পর থেকে কথা বার্তা বলা বন্ধ করে দেয়।। শুধু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে নিজের ঘরের বাম পাশের কোণার দিকে।। আর গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে থাকে।। এই সময়ে থাকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে, "কেউ একজন ঘুমের মধ্যে এসে তার গালে থাপ্পড়/চড় মারে এবং প্রচণ্ড ব্যাথায় তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।।" কিন্তু ঘুম থেকে উঠে সে কাউকেই দেখতে পায় না।। পরিবারের বাকি সদস্যরা লক্ষ্য করে, মেয়েটির গালে লাল লাল চড়ের দাগ স্পষ্ট দেখা যায়।।

অবস্থা বেগতিক দেখে অবশেষে শাইখ আলী চাচা পরিবার নিয়ে ঐ বাড়ি থেকে সরে যান।। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেই বাড়ি ছেড়ে দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়েটি আবার নিজের পুরনো জীবন ফিরে পায়।।

তথ্যটি জানিয়েছেনঃ আহসান সেলিম অরণ্য (Ahsan Selim Oronno) (অ্যাডমিন)

ভালো লাগলে আপনারা এখন পিসির পাশাপাশি মোবাইল থেকেও শেয়ার করতে পারেন।। :)




 গল্প


তখন আমার বয়স প্রায় ১৮. আমি ছোটকাল হতেই বেশ ফুরতিবাজ ছিলাম, বাড়ির ছোট ছেলে হউয়ায় আমার কোন কাজেই কোনদিন কেও বাধা দেয়নি। আমার একটি ঘোড়া ছিল, তার নাম মানিক। আমি মানিক কে নিয়ে দূরদুরান্ত ঘুরে বেড়াতাম আর গান-বাজনা এবং যাত্রার প্রতি ছিল আ

মার দুর্নিবার আকর্ষণ।

একদিন কগবর পেলাম দেওয়ানগঞ্জে যাত্রা দল এসেছে, আমি সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম। বিকালের পর আমি যেয়ে পৌঁছাই। সন্ধার পর জাত্রার আশর বসে, শেষ হয় অনেক রাতে। আমি যাত্রা শেষে মানিক কে নিয়ে আবার বকশিগঞ্জ পুবের পাড়ার উদ্দেশে রউনা দেই। আমি যখন পল্লাকান্দি তখন রাত আনুমানিক ১০ টা বা তার আশেপাশে। তখন নিঝুম রাত, পুরো এলাকা নিস্তব্ধ নীরব। শুধু মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আর রাতের আকাশের নাম না জানা পাখির আর্তনাদ। কখনও কানে আসে হুতুম পেঁচার ডাক। পরিবেশটা মোটেও সুখকর নয়, তবে আমি ছিলাম শিক্ষিত এক সাহসী জুবক, গ্রাম্য কুসংস্কার কখনই মনে দানা বাধতে দিতাম না, তাই নদীর পাড় ধরে এগিয়ে গেলাম নৌকার সন্ধানে। ঘাঁটের শেষ মাথায় একটি নৌকা পেলাম, নৌকায় মানিককে নিয়ে উঠলাম। আমার সাথে নৌকায় আরোহী মাত্র একজন, আর নৌকার মাঝি। আমি, মানিক, সাথের জাত্রি আর মাঝি ছাড়া মনে হয় আশেপাশের এলাকায় আর জীবিত কোন প্রাণী নেই। হটাত মাঝি বলে উঠে, ভাইজান আপনাকে দেখে তো মনে হয় বড় ঘরের ছেলে, তবে এত রাতে এখানে কি করেন, কই যাবেন ? আমি তাকে সব খুলে বলি আর তার জবাব, এত রাতে যেয়েন না। বিপদ হবে।

আমি হেসে ফেলি, আর বলি, কোন ডাকাতের সাহসে কুলাবেনা আমার নাম শোনার পর আর আমাকে আটকাবে।
তখন আমার সাথের আরোহী বলে উঠলো, ভাই ডাকাততো মানুষ, আমরা যে বিপদের কথা বলছি তা ঠিক মানুষ না।
আমি হেসে বললাম যে এসব আমি বিশ্বাস করিনা। তখন তারা বলল, ভাই তাও যেয়েন না, আমাদের বাড়ি কাছেই, রাতটি কাটান আর সকালে যেয়েন, পথে জন্তু-জানোয়ার তো থাকতে পারে। আমি বললাম, আমার যেতেই হবে।
এরপরও তারা সাবধান করে দিলো আর বলে দিলো সারমারা বাজার থেকে বামের রাস্তায় উঠতে, ডানে না যেতে কারন ওই রাস্তা জঙ্গল এলাকার ভিতর। কথাটা আমারও মনে ধরলো। আমি নৌকা থেকে নেমে আবার রউনা দিলাম।
রাত আনুমানিক ১টা। তখন আমি সারমারা বাজারে, পুরো এলাকা নিস্তব্ধ বিরান ভুমির মত দেখাচ্ছে। কোথাও বিন্দু মাত্র জীবনের চিহ্ন নেই, পোকামাকড় কিংবা পাখিরও শব্দ নেই, যেন সমস্ত এলাকাটাই মারা গেছে। আমার তখন খুব খারাপ অবস্থা, মানিকেরও পানি দরকার। আমি খেয়াল করলাম ওই ডান পাশের রাস্তাতেই বেশ দূরে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে যার আঙ্গিনায় আগুন জলছে। আমি আশা নিয়ে ওদিকে গেলাম। কিন্তু মানিক আমার সাথে এগোতে চায় না। এমন তো হউয়ার কথা না, মানিক কখনও এমন করেনা, ছোট একটা বাচ্চা অবস্থা থেকে ওকে বড় করেছি, কখনও আমার অবাধ্য হয়না, তবু আমি ওকে রাস্তায় রেখেই হাঁটা দিলাম। বাড়ির আঙিনায় এসে দেখি এক অগ্নি কুণ্ড জলছে, যেন কেও আগুন তাপানোর জন্য খরে আগুন দিয়েছে। এক মহিলাকে দেখলাম, সেই আগুনের আলোয় মাটিতে বসে হাড়ি পাতিল মাজছে। নিল শাড়ি পড়া, দেখেই বোঝা যায় নতুন বউ কারন তার মাথায় ঘোমটা দেয়া। একটু অবাক লাগলো কারন এত রাতে কেও উঠানে আগুনের আলোয় হাড়ি-পাতিল মাজে না আর বাড়িতে অন্য কোন লকেরও আনাগোনা দেখছিনা।
আমি একটু কাছে যেয়ে বললাম “খালাগো আমাকে একটু পানি দিবেন, আমার আর আমার ঘোড়ার জন্য”
সে পাতিল মাজা বন্ধ করে দিলো, আর চুপ হয়ে থাকলো, আমি আবার কাছে যেয়ে বললাম, ও খালা শুনেন না?
তখন সে ধীরে ধীরে আমার দিকে চাইলো......
আমি যা দেখলাম, তা... ।
ঘোমটার ভিতর কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার, শুধু দুটো রক্ত লাল চোখ আর মুখের গহব্বর থেকে এক হাত লম্বা জিভ ঝুলছে। সেই জিভ নড়েচড়ে উঠলো আর বের হয়ে এলো এক আঙ্গুল সমান লম্বা দুইটা শ্বদন্ত।
আমার দিন দুনিয়া আধার হয়ে এলো, কিন্তু টোলে পড়ার আগে শেষ মুহূর্তে মনে হোল, বাঁচতে চাইলে পালাতে হবে। আমি ঘুরে দৌর দিলাম রাস্তার দিকে, আর পিছন থেকে শুনতে পেলাম এক জান্তব আর্তনাদ মিস্রিত চিৎকার।
মানিকের কাছে পৌঁছে ওকে সামনের দিকে টান দিলাম, কিছুটা রাস্তা পাড় হউয়ার পর দেখি মানিক থেমে গেলো। চারজন মানুষ আসতে দেখলাম একটু মৌলানা গোছের। তারা কাছে এসে আমাকে দেখে বলল ভাই আপনি সরকার সাহেবের ছেলে না ?
এই অন্ধকারে কিভাবে চিনলো আমাকে, তা ঠিক বুঝলাম না কিন্তু বললাম, হ্যাঁ।
তাদের সব খুলে বললাম আর তারা আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলো। একটা দেয়াল ঘেরা বাগান টাইপ এলাকার কাছে এনে আমাকে বলল আপনি এই গেট দিয়ে ভিতরে যান, ওই গাছের নিচে বসে বিস্রাম নেন। ভয় পাবেননা, এখানে আপনি নিরাপদ। আর আমরা আপনার থাকার বেবস্থা করে আসছি, আমরা ছাড়া অন্য কেও এসে যদি আপনাকে ডাকে, তবে বের হবেন না।
এটা বলে তারা চলে গেলো আর আমি ওই গাছের নিচে যেয়ে বসে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারবোনা। ঘুম ভাঙলো ফজরের আজান শুনে, তখন ভোরের হালকা আলো ফুটেছে, আমি দেখলাম কাছেই মসজিদের ছাদে মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছে আর সেখান থেকে হতবাক নয়নে আমাকে দেখছে। মানিককে দেখলাম দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি আগের রাতের ঘটনা মনে করছি আর কিছুক্ষণ পর দেখি ওই মুয়াজ্জিন আমার কাছে এসে পড়লো।
আমাকে জিগ্যেস করলো আমি কে, এখানে কি করছি। সব তাকে বললাম।
শুনে সে গম্ভির হয়ে গেলো আর বলল যে “প্রথমে যার পাল্লায় পড়েছিলেন সে প্রচণ্ড খারাপ এক জিনিস, অন্ধকার জগতের বাসিন্দা সে। আপনি অল্পের জন্য যানে বেঁচে গেছেন। ওই উজানতলী জঙ্গল তার এলাকা, সে উজানতলীর পিশাচ। সেখানে কেন গিয়েছিলেন? কিভাবে গিয়েছিলেন? ওইখানে তো কোন রাস্তা বা ঘরবাড়ি নেই, সুধুই জঙ্গল। হাঁটা অসম্ভব প্রায়”
আমি বললাম যে কিন্তু আমি যে রাস্তা দেখে পাড় হয়েছি, আর বাড়িও দেখেছি।
তখন মুয়াজ্জিন বলল, তা আপনাকে দেখানো হয়েছে তাই দেখেছেন।
এরপর সে বলল যে যাদের আপনি পরে পেয়েছেন, তারা জিন। তবে ভালো, তারা এই এলাকার পাহারাদার। আপনাকে এখানে এনে রেখেছে, কারন এই জায়গায় শয়তান ধুক্তে পারেনা। আপনি চারিদিক তাকিয়ে দেখেন, এটা কোন বাগান নয়, এটা একটা গরস্থান। আর মুসলমানের গোরস্থান খুবি পবিত্র আর নিরাপদ জায়গা।
আমি চারপাশে দেখলাম যে আসলেই আমি একটা গোরস্থানের মাঝখানে, এই দিনের বেলাতেও আমার গায়ে কাঁটা দিলো।

মুয়াজ্জিন লোকটা আমাকে তখনই রউনা হতে বলল আর বলে দিলো, অনেকেই পিছন থেকে ডাকতে পারে, আমি যেন ফিরে না দেখি, এমন কি সে ডাকলেও যেন না তাকাই।
আমি সেখান থেকে বের হয়েই বাসার উদ্দেশে রউনা দিলাম, কয়েকবার কেও আমায় যেন পিছন থেকে ডাকল, কিন্তু ওই মুয়াজ্জিনের নিষেধ থাকায় আমি পিছন ফিরে দেখিনি।
বাড়ি এসে আমি নিমপাতা ফুটানো পানি দিয়ে গোসল করলাম আর তউবা করলাম, রাত-বিরেতে আর বাসা থেকেই বের হবোনা।


(সংগৃহীত)


Photo: তখন আমার বয়স প্রায় ১৮. আমি ছোটকাল হতেই বেশ ফুরতিবাজ ছিলাম, বাড়ির ছোট ছেলে হউয়ায় আমার কোন কাজেই কোনদিন কেও বাধা দেয়নি। আমার একটি ঘোড়া ছিল, তার নাম মানিক। আমি মানিক কে নিয়ে দূরদুরান্ত ঘুরে বেড়াতাম আর গান-বাজনা এবং যাত্রার প্রতি ছিল আ
মার দুর্নিবার আকর্ষণ।

একদিন কগবর পেলাম দেওয়ানগঞ্জে যাত্রা দল এসেছে, আমি সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম। বিকালের পর আমি যেয়ে পৌঁছাই। সন্ধার পর জাত্রার আশর বসে, শেষ হয় অনেক রাতে। আমি যাত্রা শেষে মানিক কে নিয়ে আবার বকশিগঞ্জ পুবের পাড়ার উদ্দেশে রউনা দেই। আমি যখন পল্লাকান্দি তখন রাত আনুমানিক ১০ টা বা তার আশেপাশে। তখন নিঝুম রাত, পুরো এলাকা নিস্তব্ধ নীরব। শুধু মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ আর রাতের আকাশের নাম না জানা পাখির আর্তনাদ। কখনও কানে আসে হুতুম পেঁচার ডাক। পরিবেশটা মোটেও সুখকর নয়, তবে আমি ছিলাম শিক্ষিত এক সাহসী জুবক, গ্রাম্য কুসংস্কার কখনই মনে দানা বাধতে দিতাম না, তাই নদীর পাড় ধরে এগিয়ে গেলাম নৌকার সন্ধানে। ঘাঁটের শেষ মাথায় একটি নৌকা পেলাম, নৌকায় মানিককে নিয়ে উঠলাম। আমার সাথে নৌকায় আরোহী মাত্র একজন, আর নৌকার মাঝি। আমি, মানিক, সাথের জাত্রি আর মাঝি ছাড়া মনে হয় আশেপাশের এলাকায় আর জীবিত কোন প্রাণী নেই। হটাত মাঝি বলে উঠে, ভাইজান আপনাকে দেখে তো মনে হয় বড় ঘরের ছেলে, তবে এত রাতে এখানে কি করেন, কই যাবেন ? আমি তাকে সব খুলে বলি আর তার জবাব, এত রাতে যেয়েন না। বিপদ হবে।

আমি হেসে ফেলি, আর বলি, কোন ডাকাতের সাহসে কুলাবেনা আমার নাম শোনার পর আর আমাকে আটকাবে।
তখন আমার সাথের আরোহী বলে উঠলো, ভাই ডাকাততো মানুষ, আমরা যে বিপদের কথা বলছি তা ঠিক মানুষ না।
আমি হেসে বললাম যে এসব আমি বিশ্বাস করিনা। তখন তারা বলল, ভাই তাও যেয়েন না, আমাদের বাড়ি কাছেই, রাতটি কাটান আর সকালে যেয়েন, পথে জন্তু-জানোয়ার তো থাকতে পারে। আমি বললাম, আমার যেতেই হবে।
এরপরও তারা সাবধান করে দিলো আর বলে দিলো সারমারা বাজার থেকে বামের রাস্তায় উঠতে, ডানে না যেতে কারন ওই রাস্তা জঙ্গল এলাকার ভিতর। কথাটা আমারও মনে ধরলো। আমি নৌকা থেকে নেমে আবার রউনা দিলাম।
রাত আনুমানিক ১টা। তখন আমি সারমারা বাজারে, পুরো এলাকা নিস্তব্ধ বিরান ভুমির মত দেখাচ্ছে। কোথাও বিন্দু মাত্র জীবনের চিহ্ন নেই, পোকামাকড় কিংবা পাখিরও শব্দ নেই, যেন সমস্ত এলাকাটাই মারা গেছে। আমার তখন খুব খারাপ অবস্থা, মানিকেরও পানি দরকার। আমি খেয়াল করলাম ওই ডান পাশের রাস্তাতেই বেশ দূরে একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে যার আঙ্গিনায় আগুন জলছে। আমি আশা নিয়ে ওদিকে গেলাম। কিন্তু মানিক আমার সাথে এগোতে চায় না। এমন তো হউয়ার কথা না, মানিক কখনও এমন করেনা, ছোট একটা বাচ্চা অবস্থা থেকে ওকে বড় করেছি, কখনও আমার অবাধ্য হয়না, তবু আমি ওকে রাস্তায় রেখেই হাঁটা দিলাম। বাড়ির আঙিনায় এসে দেখি এক অগ্নি কুণ্ড জলছে, যেন কেও আগুন তাপানোর জন্য খরে আগুন দিয়েছে। এক মহিলাকে দেখলাম, সেই আগুনের আলোয় মাটিতে বসে হাড়ি পাতিল মাজছে। নিল শাড়ি পড়া, দেখেই বোঝা যায় নতুন বউ কারন তার মাথায় ঘোমটা দেয়া। একটু অবাক লাগলো কারন এত রাতে কেও উঠানে আগুনের আলোয় হাড়ি-পাতিল মাজে না আর বাড়িতে অন্য কোন লকেরও আনাগোনা দেখছিনা।
আমি একটু কাছে যেয়ে বললাম “খালাগো আমাকে একটু পানি দিবেন, আমার আর আমার ঘোড়ার জন্য”
সে পাতিল মাজা বন্ধ করে দিলো, আর চুপ হয়ে থাকলো, আমি আবার কাছে যেয়ে বললাম, ও খালা শুনেন না?
তখন সে ধীরে ধীরে আমার দিকে চাইলো......
আমি যা দেখলাম, তা... ।
ঘোমটার ভিতর কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার, শুধু দুটো রক্ত লাল চোখ আর মুখের গহব্বর থেকে এক হাত লম্বা জিভ ঝুলছে। সেই জিভ নড়েচড়ে উঠলো আর বের হয়ে এলো এক আঙ্গুল সমান লম্বা দুইটা শ্বদন্ত।
আমার দিন দুনিয়া আধার হয়ে এলো, কিন্তু টোলে পড়ার আগে শেষ মুহূর্তে মনে হোল, বাঁচতে চাইলে পালাতে হবে। আমি ঘুরে দৌর দিলাম রাস্তার দিকে, আর পিছন থেকে শুনতে পেলাম এক জান্তব আর্তনাদ মিস্রিত চিৎকার।
মানিকের কাছে পৌঁছে ওকে সামনের দিকে টান দিলাম, কিছুটা রাস্তা পাড় হউয়ার পর দেখি মানিক থেমে গেলো। চারজন মানুষ আসতে দেখলাম একটু মৌলানা গোছের। তারা কাছে এসে আমাকে দেখে বলল ভাই আপনি সরকার সাহেবের ছেলে না ?
এই অন্ধকারে কিভাবে চিনলো আমাকে, তা ঠিক বুঝলাম না কিন্তু বললাম, হ্যাঁ।
তাদের সব খুলে বললাম আর তারা আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলো। একটা দেয়াল ঘেরা বাগান টাইপ এলাকার কাছে এনে আমাকে বলল আপনি এই গেট দিয়ে ভিতরে যান, ওই গাছের নিচে বসে বিস্রাম নেন। ভয় পাবেননা, এখানে আপনি নিরাপদ। আর আমরা আপনার থাকার বেবস্থা করে আসছি, আমরা ছাড়া অন্য কেও এসে যদি আপনাকে ডাকে, তবে বের হবেন না।
এটা বলে তারা চলে গেলো আর আমি ওই গাছের নিচে যেয়ে বসে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারবোনা। ঘুম ভাঙলো ফজরের আজান শুনে, তখন ভোরের হালকা আলো ফুটেছে, আমি দেখলাম কাছেই মসজিদের ছাদে মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছে আর সেখান থেকে হতবাক নয়নে আমাকে দেখছে। মানিককে দেখলাম দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি আগের রাতের ঘটনা মনে করছি আর কিছুক্ষণ পর দেখি ওই মুয়াজ্জিন আমার কাছে এসে পড়লো।
আমাকে জিগ্যেস করলো আমি কে, এখানে কি করছি। সব তাকে বললাম।
শুনে সে গম্ভির হয়ে গেলো আর বলল যে “প্রথমে যার পাল্লায় পড়েছিলেন সে প্রচণ্ড খারাপ এক জিনিস, অন্ধকার জগতের বাসিন্দা সে। আপনি অল্পের জন্য যানে বেঁচে গেছেন। ওই উজানতলী জঙ্গল তার এলাকা, সে উজানতলীর পিশাচ। সেখানে কেন গিয়েছিলেন? কিভাবে গিয়েছিলেন? ওইখানে তো কোন রাস্তা বা ঘরবাড়ি নেই, সুধুই জঙ্গল। হাঁটা অসম্ভব প্রায়”
আমি বললাম যে কিন্তু আমি যে রাস্তা দেখে পাড় হয়েছি, আর বাড়িও দেখেছি।
তখন মুয়াজ্জিন বলল, তা আপনাকে দেখানো হয়েছে তাই দেখেছেন।
এরপর সে বলল যে যাদের আপনি পরে পেয়েছেন, তারা জিন। তবে ভালো, তারা এই এলাকার পাহারাদার। আপনাকে এখানে এনে রেখেছে, কারন এই জায়গায় শয়তান ধুক্তে পারেনা। আপনি চারিদিক তাকিয়ে দেখেন, এটা কোন বাগান নয়, এটা একটা গরস্থান। আর মুসলমানের গোরস্থান খুবি পবিত্র আর নিরাপদ জায়গা।
আমি চারপাশে দেখলাম যে আসলেই আমি একটা গোরস্থানের মাঝখানে, এই দিনের বেলাতেও আমার গায়ে কাঁটা দিলো।

মুয়াজ্জিন লোকটা আমাকে তখনই রউনা হতে বলল আর বলে দিলো, অনেকেই পিছন থেকে ডাকতে পারে, আমি যেন ফিরে না দেখি, এমন কি সে ডাকলেও যেন না তাকাই।
আমি সেখান থেকে বের হয়েই বাসার উদ্দেশে রউনা দিলাম, কয়েকবার কেও আমায় যেন পিছন থেকে ডাকল, কিন্তু ওই মুয়াজ্জিনের নিষেধ থাকায় আমি পিছন ফিরে দেখিনি।
বাড়ি এসে আমি নিমপাতা ফুটানো পানি দিয়ে গোসল করলাম আর তউবা করলাম, রাত-বিরেতে আর বাসা থেকেই বের হবোনা।

গল্প ভালো লাগলে Like ক্লিক করতে ভুলবেন না ।

(সংগৃহীত)

(অরণ্য)

Bondhu Sms

Bondhu tomay vabchi ami/Akla bose ghore/Tomar sathe dingulo sob/Ajke mone pore/Nei jodio kache amar,acho moner majhe/Tomar hasir misti se sur,ajo kane baje...GM



Joto dure jao na keno aachi tomar pashe,
Takiye dekho akash paane ghum jodi na aashe.
Kache amai pabe tumi haat barabe jei,
Jodi na pao janbe sedin ami ar nei.





Aro 1bar bondhu hobo tor hat dhore.Aro 1bar basbo valo tor moto kore.1bar noy chorui holi amr chilekothay,harie jasna pls..toke khujbo ami kothay?...Lv u..Tk cr

Happy Mother's Day

Prothom sporsho Maa.
prothom paoa Maa.
prothom shobdo Maa.
meri maa..amma..

This 8th may on Mothers Day.

4wrd dis msg who loves their mother vry much..